প্রকাশিত: ০৬/১০/২০১৮ ৭:৪৯ এএম

ক্ষমতাসীনদের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। উনাকে মুক্তি না দিলে আপনারাও মুক্তি পাবেন না। উনিই শেষ ভরসা, যাকে মুক্তি দিলে আপনারা মুক্ত থাকতে পারবেন। এ কথাটা আমি সিরিয়াসলি বলছি- উনিই শেষ ভরসা, উনিই গণতন্ত্রের প্রতীক। তিনিই পারবেন একটা গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে। তাকে বের করে নিয়ে আসুন। অন্যথা এই দেশে যে সংকট তৈরি হবে সেই সংকট মোকাবেলা করতে আপনারা ব্যর্থ হবেন।’

শুক্রবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির একেএম সিদ্দিক হলে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজবীবী পরিষদ আয়োজিত এক সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ মামলার প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি যে কথাটা বলতে চাই, জনগণের আশ-আকাঙ্ক্ষা বাদ দিয়ে তাকে এড়িয়ে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। এখানে অবশ্যই জনগণ যা চায় সেভাবে কাজ করতে হবে। আমি বলব, অনেক হয়েছে। এনাফ ইজ এনাফ। এখন দয়া করে মাথার মধ্যে একটু শুভবুদ্ধি নিয়ে আসুন, নিয়ে এসে একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দিন।’

নির্বাচনের আগেই সরকার দলের শীর্ষ নেতাদের মামলা দ্রুততার সঙ্গে শেষ করার ‘ষড়যন্ত্র’ করছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘ দেশে এখন কোনো আইনের শাসন নেই। ম্যাডামের মামলায় দেখছেন যে, কী ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে তার সঙ্গে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাহেবের মামলাগুলোও একই ঘটনা ঘটছে। আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে আগে যেসব মামলা ছিল সেই মামলাগুলো এখন এক্সেপেডাইড করার জন্য সাপ্তাহে তিনদিন মামলার তারিখ দিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ দ্রুততার সঙ্গে নির্বাচনের আগে তারা সবকিছু শেষ করতে চায়। বিএনপিকে এতো ভয় কেন? জনগণকে এতো ভয় কেন? কেন একটা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে চান না? কারণ, আপনি জেনে গেছেন যে, জনপ্রিয়তা এখন আপনার শূন্যের কোঠায় এসে গেছে।’

জাতিসংঘে সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলন করে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার প্রতি ইঙ্গিত করে ফখরুল বলেন, ‘আবার গর্ব করে বলেন, বিশ্বনেতারা সব আমাকে চাচ্ছে, আমাদের চাচ্ছে। যে দেশের জনগণ চায় না, বিশ্বনেতারা চাইলে কী ক্ষমতায় টিকে থাকা যায়।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগে এখন দেউলিয়া হয়ে গেছে, তাদের কোনো রাজনীতি নেই। ভাবতেই অবাক লাগে আওয়ামী লীগের মতো দীর্ঘকাল রাজনৈতিক সংগ্রাম করা দল আজকে সম্পূর্ণভাবে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শুধু রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর নির্ভর করে দেশ চালাচ্ছে।’

জাতীয় ঐক্যের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন ঘটানো যাবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে ফখরুল বলেন, ‘ আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি, এই অবস্থার অবসান করতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলে গেছেন যে, একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে, জাতীয় ঐক্যের মধ্য দিয়ে এই ভয়ঙ্কর ফ্যাসিস্ট এক নায়কতান্ত্রিক একটা দল, যে দল একদলীয় শাসন নিয়ে আসতে চায় তাদের সরাতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ তাদের না সরাতে পারলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব পর্যন্ত বিপন্ন হয়ে যাবে। সেই লক্ষ্যে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, পেশাজীবী বলুন, রাজনীতিবিদ বলুন, সবাই আসুন নিজ নিজ অবস্থান থেকে আমরা আন্দোলন শুরু করি।’

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ২১ আগস্টের মামলায় আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, আবদুস সালাম পিন্টুকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আমাদের নেতাদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ দেখেন এসব করে কী করা হয়েছে ? মামলার সুষ্ঠু তদন্তটা করা হয়নি। মূল যে বিষয়টা- অপরাধীদের খুঁজে বের করা, সেটা তারা বের করেনি। তারা কিন্তু গোপনে আড়ালে থেকেই গেছে।’

সংগঠনের সহ-সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনের পরিচালনায় সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আখতার হোসেন খান, এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, লুৎফর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডী প্রমুখ বক্তব্য দেন।

পাঠকের মতামত

২ বাংলাদেশিকে গুলি করে মারল বিএসএফ, মরদেহ নিয়ে গেল ভারতীয় পুলিশ

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় খয়খাটপাড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। পরে তাদের ...